সুরা আল-লাহাব

সুরা আল-লাহাব (সুরা ১১১) এর তাফসীর দলীলসহ ব্যাখ্যা


সুরা আল-লাহাব

সুরা আল-লাহাব মক্কী সুরা এবং এটি ৫ আয়াতের সংকলন। এই সুরাটি আবু লাহাবের কাহিনী ও তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্কিত, যারা নবী (সা.)-এর বিরোধী ছিলেন এবং ইসলামের শত্রু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সুরা আল-লাহাব মূলত একটি হুমকি ও সতর্কীকরণ সুরা, যেখানে আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছেন যারা ইসলাম এবং তার ধারক নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

এখানে সুরা আল-লাহাবের তাফসীর এবং দলীলসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

আয়াত ১:
উচ্চারণ: তাব্বত ইয়াদা আবী লাহাবিন ওয়াতাব
তর্জমা: "অধঃপতিত হোক আবু লাহাবের দুটি হাত এবং সে ধ্বংস হয়ে যাক।"

তাফসীর:

v  তাব্বত (ধ্বংস হওয়া): "তাব্বত" শব্দটি একটি কঠিন শাস্তি এবং ধ্বংসের পক্ষে নির্দেশনা দেয়। এখানে আবু লাহাবের দুটি হাতের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ তার সমস্ত কাজ এবং প্রচেষ্টা ব্যর্থ ও শাস্তিযোগ্য হবে।

v  আবী লাহাব: আবু লাহাব ছিলেন নবী (সা.)-এর চাচা, যিনি ইসলামের প্রচারকে অস্বীকার করেছিলেন এবং মুসলমানদের প্রতি নিরন্তর শত্রুতা প্রদর্শন করেছিলেন। "আবী লাহাব" শব্দের আক্ষরিক অর্থ "জ্বলন্ত হাত" বা "আগুনের হাত"।

v  তাফসীর: এই আয়াতটি আল্লাহ আবু লাহাবের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছেন, যিনি নবী (সা.)-এর প্রতি অমান্যতা ও শত্রুতা প্রদর্শন করেছিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

আয়াত ২:
উচ্চারণ: মা আগনা আনহু মালুহু ও মা কাসাব
তর্জমা: "তার যে সমস্ত ধন-সম্পদ এবং যা কিছু সে অর্জন করেছিল, তাও তার উপকারে আসবে না।"

তাফসীর:

v মা আগনা আ عنه মালুহু (তার ধন-সম্পদ কিছুই তাকে উপকারে আসবে না): এখানে বলা হচ্ছে, পৃথিবীতে তার যত সম্পদ এবং যে সমস্ত জ্ঞানে ও যশে সে সম্মানিত ছিল, তা তার কোন কাজে আসবে না, যখন আল্লাহর শাস্তি তার ওপর নেমে আসবে।

v মা কাসাব (যা সে অর্জন করেছিল): এর মানে হলো, যতটা দুনিয়াবী সম্পদ ও অর্জন তার ছিল, তা তার শাস্তি থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।

v তাফসীর: এই আয়াতে আবু লাহাবকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, তার শত্রুতা ও আল্লাহর নির্দেশকে অস্বীকার করার কারণে তার সমস্ত দুনিয়াবী সম্পদ ও অর্জন কোন কাজেই আসবে না, যদি সে আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হয়। (তাফসীর আল-জালালাইন)

আয়াত ৩:
উচ্চারণ: সাওফা সলাই নারান কাঠালা
তর্জমা: "সে শীঘ্রই প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।"

তাফসীর:

v  সাওফা (শীঘ্রই): এখানে "শীঘ্রই" শব্দটির মাধ্যমে এর নিশ্চয়তা ও অবশ্যম্ভাবিতাকে বোঝানো হচ্ছে, অর্থাৎ আবু লাহাবের জন্য শাস্তি দ্রুত আসবে।

v  সলাই (প্রবেশ করবে): এটি আবু লাহাবের জন্য অগ্নিদণ্ডের নিশ্চিত ঘটনা বর্ণনা করছে।

v  নারান কাঠালা (যে আগুন তাকে ছিঁড়ে ফেলবে): এই আগুন দোজখের আগুন, যা অত্যন্ত কঠোর এবং শাস্তিমূলক। এটি এক ধরনের শাস্তি যা আল্লাহ অবাধ্যদের জন্য প্রস্তুত করেছেন।

v  তাফসীর: এই আয়াতে আবু লাহাবের শাস্তি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সে শীঘ্রই জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, এবং তার শাস্তি কোনমতেই অতিক্রমযোগ্য নয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

আয়াত ৪:
উচ্চারণ: ওয়া ইমরাতুহু হাম্মালাতাল হতাব
তর্জমা: "এবং তার স্ত্রী, যে একখানা কাঠের জ্বালানি বহনকারী।"

তাফসীর:

v  ইমরাতুহু (তার স্ত্রী): আবু লাহাবের স্ত্রী ছিল তার সঙ্গে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার এক সক্রিয় অংশীদার।

v  হাম্মালাতাল হতাব (কাঠের জ্বালানি বহনকারী): এখানে "হতাব" শব্দটি একটি বিশেষ ধরনের কাঠের টুকরা বোঝায় যা আগুন জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তার স্ত্রীর শাস্তি এইভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে নিজেই এই কাঠের টুকরাগুলি তার হাতে বহন করবে এবং শাস্তির অংশ হবে।

v  তাফসীর: এই আয়াতে আবু লাহাবের স্ত্রীর ভূমিকা ও তার শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, কারণ সে নিজেও তার স্বামীর মতো নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক কার্যক্রম চালিয়েছিল এবং আল্লাহর পথের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। (তাফসীর আল-জালালাইন)

আয়াত ৫:
উচ্চারণ:ফি জিদিহা হাবলুম মিন মাসাদ
তর্জমা:"তার গলায় থাকবে এক বড় শক্ত রশি।"

তাফসীর:

v  ফি জিদিহা (তার গলায় থাকবে): এটি তার শাস্তি বুঝাচ্ছে, যা হবে দোজখে। তার গলায় একটি কঠিন রশি থাকবে।

v  হাবলুম মিন মাসাদ (একটি শক্ত রশি): "হাবল" একটি শক্ত রশি বা দড়ি বোঝায়, যা তার শাস্তি বা প্রহরের অংশ হবে। এটি তার জন্য শাস্তির একটি চিহ্ন।

v  তাফসীর: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ শাস্তির বর্ণনা, যেখানে আবু লাহাবের স্ত্রীর গলায় একটি কঠিন রশি থাকবে এবং সে তার দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যে দগ্ধ হবে। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

সুরা আল-লাহাবের সারাংশ:

সুরা আল-লাহাব মূলত আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ঘোষণা করার সুরা। আবু লাহাব নবী (সা.)-এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেছিলেন, যার ফলে তিনি আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেননি। সুরা আল-লাহাব তার এবং তার স্ত্রীর শাস্তি বর্ণনা করে, যা দোজখের আগুনে অগ্নিদণ্ড এবং শাস্তির ভয়াবহতা।

এটি একটি সতর্কীকরণ এবং হুমকি, যে যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তি অবশ্যই আসবে।

 

আরো পড়ুন

Ø টেকনোলজি তথ্য
Ø  ইসলাম ও বিজ্ঞান
Ø  ইসলামী ইতিহাস
Ø  কুরআন ও তাফসীর
Ø  ভিন্ন ধর্ম

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post