সুরা আল-নাসর বাংলা উচ্চারন, অর্থ এবং ব্যখ্যা

 

সুরা আল-নাসর (সুরা ১১০) এর তাফসীর দলীলসহ ব্যাখ্যা


সুরা আল-নাসর


সুরা আল-নাসর মদনী সুরা এবং এটি ৩ আয়াতের সংকলন। এই সুরাটি নবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন ইসলামের জয় এবং ধর্মের প্রসারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সুরা আল-নাসর মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি শুভসংবাদ, যা ইসলামের বিজয় এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রতীক হিসেবে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে এক ধরনের নীরব সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর প্রশংসা, যা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

এখানে সুরা আল-নাসরের তাফসীর এবং দলীলসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

আয়াত ১:
উচ্চারণ: ইযা জা আনাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ
তর্জমা: "যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় উপস্থিত হবে।"

তাফসীর:

v  ইযা (যখন): "ইযা" শব্দটি ভবিষ্যতের কোনো সময় নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে আল্লাহ নবী (সা.) এবং তার অনুসারীদের জন্য একটি সুখবর প্রদান করছেন। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় শীঘ্রই আসবে।

v  নাসরুল্লাহ (আল্লাহর সাহায্য): এটি আল্লাহর বিশেষ সাহায্য বোঝায় যা তিনি তার রাসুল এবং মুমিনদের জন্য প্রেরণ করেন। এই সাহায্য হল ঐশী সাহায্য, যা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।

v  ফাতহ (বিজয়): "ফাতহ" শব্দের মাধ্যমে ইসলামি বিজয় বোঝানো হয়েছে, যা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের প্রধান ঐতিহাসিক জয় এবং এটি ইসলামের প্রচার ও সম্প্রসারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

v  তাফসীর: এই আয়াতটি সুরা আল-নাসরের প্রথম অংশ, যেখানে আল্লাহ তার সাহায্য এবং বিজয়ের ঘোষণা করেছেন। এটি মক্কা বিজয়ের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন মুসলমানরা শহরটি বিজয়ীভাবে গ্রহণ করেছিলেন। এই বিজয়ের ফলে ইসলাম দ্রুত প্রসারিত হতে শুরু করে। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

আয়াত ২:
উচ্চারণ: ওয়া রঊইতান নাসা ইয়াদখুলূনা ফি দীনিল্লাহি আফওজা
তর্জমা: "এবং তুমি দেখতে পাবে মানুষ আল্লাহর ধর্মে দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করছে।"
তাফসীর:

v  ওয়া রঊইতান (এবং তুমি দেখতে পাবে): এটি নবী (সা.)-এর প্রতি একটি বিশেষ বার্তা, যেখানে বলা হচ্ছে যে তিনি আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়ের পর মানুষদের ধর্ম গ্রহণের দৃশ্য দেখবেন।

v  নাসা (মানুষ): এখানে "নাসা" শব্দের মাধ্যমে সকল মানুষকে বোঝানো হচ্ছে যারা ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে দলবদ্ধভাবে ইসলাম গ্রহণ করবে।

v  ইদখুলুনা ফি দীনিল্লাহি আফওজা (আল্লাহর ধর্মে দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করা): এই বাক্যটি নির্দেশ করে যে, মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণকারী মানুষদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং একে একে তারা ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করবে। "আফওজা" শব্দটি একাধিক লোকের প্রবাহ বা ঢল বোঝায়, যা মুসলমানদের বৃদ্ধি এবং ইসলামের জয়কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।

v  তাফসীর: এই আয়াতে নবী (সা.)-এর জন্য একটি শুভসংবাদ দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি দেখতে পাবেন যে মানুষ আল্লাহর পথে প্রবেশ করবে। মক্কা বিজয়ের পর সত্যিই ইসলামের প্রতি মানুষের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। (তাফসীর আল-জালালাইন)

আয়াত ৩:
উচ্চারণ: ফাসবিহি হামদা রাব্বিকা ওয়া স্তাগফিরুহু ইন্নাহু কানা তাওওয়াবা
তর্জমা: "তাহলে তুমি তোমার পালনকর্তাকে প্রশংসা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি তওবা গ্রহণকারী।"

তাফসীর:

v  ফাসবিহি (তাহলে তুমি) হামদা রাব্বিকা (তোমার পালনকর্তার প্রশংসা কর): এই অংশটি নবী (সা.)-এর প্রতি নির্দেশনা যে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করবেন, বিশেষত যখন তিনি আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়ের দৃশ্য দেখবেন।

v  ওয়া স্তাগফিরুহু (এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর): এটি নবী (সা.)-এর জন্য নির্দেশ যে আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়ের পরেও তাকে নিজেকে তওবা ও ক্ষমা চাওয়া উচিত, কারণ একজন নবীর পক্ষ থেকেও আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও শুকরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

v  ইন্নাহু কানা তাওওয়াবা (নিঃসন্দেহে তিনি তওবা গ্রহণকারী): আল্লাহ সর্বদা তওবা গ্রহণকারী, অর্থাৎ তিনি তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে তওবা গ্রহণ করেন এবং তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন।

v  তাফসীর: এই আয়াতে নবী (সা.)-এর জন্য আল্লাহর প্রশংসা ও ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে বিজয় এবং সাহায্য পাওয়ার পরেও আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার এবং তওবা করতে হবে। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

সুরা আল-নাসরের সারাংশ:

সুরা আল-নাসর মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় লাভ করেছিলেন। এই সুরায় আল্লাহ তার সাহায্য এবং ইসলামের বিজয়ের ঘোষণা করেছেন, যেখানে মুসলমানরা দেখতে পাবেন যে মানুষ ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়ে একে একে ইসলাম গ্রহণ করছে। সুরাটি নবী (সা.)-এর জন্য একটি শুভসংবাদ ছিল এবং এটি তাকে আল্লাহর প্রতি প্রশংসা ও তওবা প্রার্থনার জন্য উৎসাহিত করেছে।

এটি মুসলমানদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা, যেখানে তারা শিখে যে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের পরেও তার কাছে ধৈর্য ও প্রশংসা করা উচিত এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরিপূর্ণতা অর্জন করতে হবে।

 

আরো পড়ুন

Ø টেকনোলজি তথ্য
Ø  ইসলাম ও বিজ্ঞান
Ø  ইসলামী ইতিহাস
Ø  কুরআন ও তাফসীর
Ø  ভিন্ন ধর্ম

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post